ঠাকুরগাঁও জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
রক্তে লেখা বিজয়ের গাঁথা ও অদম্য সাহসের গল্প
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পরই সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী জনতাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ভৌগোলিকভাবে ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও জেলার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
প্রতিরোধ ও প্রাথমিক যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঠাকুরগাঁও ইপিআর (East Pakistan Rifles) এবং স্থানীয় ছাত্র-জনতা মিলে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৬শে মার্চের পর ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে।
৬নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল, যার কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এম. খাদেমুল বাশার। এই সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল বুড়িমারীতে। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যেত এবং যুদ্ধ শেষে আবার দেশে ফিরে আসতো।
উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ও অপারেশন
ঠাকুরগাঁও জেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল। পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। অনেক স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ও ঘাঁটি ছিল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হয়েছে।
শহীদ ও বধ্যভূমি
ঠাকুরগাঁও জেলায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। রাণীশংকৈলের খুনিয়া দিঘী, সদর উপজেলার শিংপাড়া বধ্যভূমি, পীরগঞ্জের ভেলাতৈড় বধ্যভূমি সহ বেশ কিছু স্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্রনেতা এবং সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
৩রা ডিসেম্বর: ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং ঠাকুরগাঁও থেকে পালিয়ে যায়। এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা উড়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks For Your Massage