রানীশংকৈল উপজেলার জগদল রাজবাড়ি

জগদল রাজবাড়ি

জগদল রাজবাড়ি

রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে জগদল নামক স্থানে নাগর ও তীরনই নদীর মিলনস্থলে ছোট একটি রাজবাড়ি রয়েছে। রাজবাড়িটির সম্ভাব্য নির্মাণকাল ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। বর্তমানে রাজবাড়িটি প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। রাজবাড়ি থেকে প্রায় একশ মিটার পশ্চিমে নাগর নদীর পাড়ে মন্দির ছিল যা আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই।

জগদলের রাজকুমার ছিলেন শ্রী বীরেন্দ্র কুমার। তাঁর সঙ্গে বাকীপুরের জমিদার রায় পূর্ণেন্দু নারায়ণ সিংহের পুত্র শ্রী নলিনী রঞ্জনের কনিষ্ঠা কন্যা শ্রীমতি আশালতা দেবীর বিয়ে হয়। শ্রী বীরেন্দ্র কুমার সুশিক্ষিত ছিলেন। বইয়ের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ। এ কারণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সমৃদ্ধ পাঠাগার। তৎকালীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজ - বর্তমান দিনাজপুর সরকারি কলেজে ১৯৪৮ সালে তাঁর পাঠাগারের বইগুলো দান করা হয়, যার মূল্যমান ধরা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা।

জগদল রাজবাড়ির ভগ্নদশা
জগদল রাজবাড়ির বর্তমান ভগ্নদশা

প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ

রানীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর - আজকের নেকমরদে ছিল খরস্রোতা কাইচা নদী। নদীর তীরে গড়ে উঠে জনপদ। এই জনপদের সভ্যতা কতখানি প্রাচীন তা নির্ণয় করা দুষ্কর। খরস্রোতা কাইচা নদীও আজ বিলুপ্ত প্রায়। নেকমরদ ও তার নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে মাটির নিচে পাওয়া যায় প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন। দুর্গ, দিঘি, মন্দির-মন্ডপ, পাথর-ব্রোঞ্জের মূর্তিসহ অসংখ্য ছোটবড় পাথরের নিদর্শন প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদের স্মৃতিই বহন করছে।

ড. দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর 'বৃহৎ বঙ্গ' গ্রন্থে 'করবর্তন রাজী' বা 'কর্মবাটন' নামক প্রাচীন উত্তরবঙ্গের একটি স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। অনেকের ধারণা 'করবর্তন রাজী' বা করবর্তন রাজ্যের রাজধানী ছিল নেকমরদেই। নেকমরদের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রায় বিশ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এবং মাজারের দেড় কিলোমিটার উত্তরে গড়গ্রামের প্রাচীন দুর্গ রাজধানীর ধারণাটিকে সমর্থন করে।

নীহারঞ্জন রায় তাঁর 'বাঙালীর ইতিহাস (আদি পর্ব)' গ্রন্থেও করবত্তন বা করপত্তন বা করমবত্তন নামক একটি জায়গার কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে প্রতিদিন সকাল বেলা ১৫০০ টাঙ্গন (টাট্টু) ঘোড়া বিক্রয় হতো। তিনি বলেছেন কেউ কেউ মনে করেন এটি দিনাজপুর জেলার অর্থাৎ বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার নেকমরদ হাট। এখান থেকেই লক্ষণাবতীর ঘোড়া কেনা হতো।

মন্তব্যসমূহ