tag (gtag.js) --> ঠাকুরগাঁও বার্তা: মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধ

 ঠাকুরগাঁও জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:


বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পরই সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী জনতাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঠাকুরগাঁও ভৌগোলিকভাবে ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখানে মুক্তিযুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

১. প্রতিরোধ ও প্রাথমিক যুদ্ধ:

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঠাকুরগাঁও ইপিআর (East Pakistan Rifles) এবং স্থানীয় ছাত্র-জনতা মিলে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।২৬শে মার্চের পর ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রতিরোধে বেশ কিছু ছোটখাটো যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

 ২. সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধ ও সেক্টর

মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল, যার কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এম. খাদেমুল বাশার। ৬নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল বুড়িমারীতে (ভারতের অভ্যন্তরে)। এই সেক্টরের অধীনে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু অংশ ছিল। ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যেত এবং যুদ্ধ শেষে আবার দেশে ফিরে আসতো।

 ৩. উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ও অপারেশন:

 ঠাকুরগাঁও জেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ।অনেক স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ও ঘাঁটি ছিল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হয়েছে। বধ্যভূমিগুলো আজও সেই ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে। 

 ৫. মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা:

 এই অঞ্চলের বহু মানুষ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, যাদের নাম আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।  স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্রনেতা এবং সাধারণ কৃষক-শ্রমিকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন।

 ৪. শহীদ ও বধ্যভূমি:

 ঠাকুরগাঁও জেলায় অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। রাণীশংকৈলের খুनिया দিঘী, সদর উপজেলার শিংপাড়া বধ্যভূমি, পীরগঞ্জের ভেলাতৈড় বধ্যভূমি সহ বেশ কিছু স্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। 

 ৬. ঠাকুরগাঁওয়ের বিজয়:

 ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও শত্রুমুক্ত হয়। * মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং ঠাকুরগাঁও থেকে পালিয়ে যায়। এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা উড়েছিল। ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই অঞ্চলের মানুষ অদম্য সাহস ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সহায়তা করেছিল।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন